মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরেছেন ৪৫ জন বাংলাদেশি। অন্যদিকে, সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ১৩৪ বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের শূন্যরেখার জলসীমায় আসা মিয়ানমারের নৌ বাহিনীর জাহাজ ইউএমএস চিন ডুইন থেকে ৪৫ বাংলাদেশিকে নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি টাগবোট বা ছোট্ট জাহাজ গতকাল রোববার সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন নুনিয়ারছড়াস্থ বিআইডব্লিটিএ এর জেটি ঘাট এসে পৌঁছে। একই সময় অপর একটি টাগবোটে করে ঘাটে আসেন মিয়ানমারের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এর আগে সকাল ৭টা ৫মিনিটে ওই জেটি ঘাটে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আনা হয় পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে। টানা ৩ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নানা প্রক্রিয়া শেষে ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে গ্রহণ করে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর দুটি টাগবোটে করে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিআইডব্লিটিএ ঘাট থেকে যাত্রা করে তাদের সাগরে জলসীমার শূন্যরেখায় অবস্থানকারী মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে দেওয়া হবে। সেখান থেকে জাহাজটি মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা দেব। বিজিবি ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টের তথ্য মতে, গতকাল রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের চারটি বাসে করে কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ এর জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের কার্যাদি শুরু করা হয়। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশস্থ মিয়ানমারের রাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা শেষে দেশে ফেরত আসতে ৪৫ বাংলাদেশি নাগরিককে আনা হয় একই স্থানে। সেখানে চলে উভয় পক্ষের মধ্যে হস্তান্তর প্রক্রিয়া। পুরো কার্যক্রম শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েসহ প্রতিনিধি দলকে বিদায় জানান উপস্থিত কর্মকর্তারা। এই প্রক্রিয়া নিয়ে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল বা বিজিবির কোন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময় মিয়ানমারের বাহিনীর হাতে আটক ৪৫ বাংলাদেশি কারাভোগ শেষ করা দেশে ফিরেছেন। ফেরত আসাদের মধ্যে কক্সবাজার, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বাসিন্দা রয়েছে। “একই সঙ্গে মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।” এর আগে ২৫ এপ্রিল মিয়ানমার থেকে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরে ছিলেন ১৭৩ জন বাংলাদেশি। একই সঙ্গে ওইদিন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৮৮ জন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ। ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ জন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, সেনা ও কাস্টমস কর্মকর্তাকে স্বদেশে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ। ২৫ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত কয়েক দফায় আর ১৩৪ জন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও সেনা সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা বিজিবির হেফাজতে ছিলেন। গতকাল রোববার তারাই ফেরত যাচ্ছেন। এদিকে কারাভোগ শেষে দেশে ফেরা ৪৫ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাফুজুল ইসলাম বলেন, ৪৫ জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রেখে যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম চলছে। “মিয়ানমার থেকে ফেরত আসাদের মধ্যে কোনো অপরাধী বা মামলার আসামি রয়েছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। আসামি থাকলে তাদের আইনগত প্রক্রিয়া জন্য আদালতে পাঠানো হবে। না হয় স্বজনদের হস্তান্তর করা হবে। এটি সম্পন্ন করতে কিছু সময় লাগবে। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

মিয়ানমার থেকে ফিরলেন ৪৫ বাংলাদেশি, গেলেন ১৩৪ বিজিপি ও সেনা সদস্য
- আপলোড সময় : ১০-০৬-২০২৪ ১০:৩৯:০০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১০-০৬-২০২৪ ১০:৩৯:০০ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ